Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

শীতকালীন সবজি চাষাবাদের বিশেষ প্রযুক্তি

শীতকালীন সবজি চাষাবাদের বিশেষ প্রযুক্তি
কৃষিবিদ মাহাজুবা তাসমিন
জলবায়ু পরিবর্তনে বিশ^ পরিবেশ বিপর্যস্ত। পরিবেশবান্ধব কৃষি এখন সময়ের জলন্ত ইস্যু। আর তারই এক উল্লেখযোগ্য অংশ জৈব কৃষি প্রযুক্তি। রবি মৌসুম সবজি সমারোহের মৌসুম। বাংলাদেশে চাষকৃত প্রচলিত অপ্রচলিত সবজির সংখ্যা প্রায় ৯০টি যার মধ্যে ৩০টি প্রধান। সবজি চাষে আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি মাটির স্বাস্থ্য ও গুণাগুণ ঠিক রাখে ও রাসায়নিক সারের ব্যবহার কমায়। নিরাপদ/বিষমুক্ত ফসল উৎপাদন, আগাছা দমন ও কীটনাশকের প্রয়োজনীয়তা হ্রাস করে। এ সময়ে দু’টি উল্লেখযোগ্য জৈব কৃষি প্রযুক্তি ট্রাইকোকম্পোস্ট ও পলিমালচিং শিট প্রযুক্তি। নি¤েœ এ দু’টি প্রযুক্তির বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
মালচিং এর ধারাবাহিকতায় এসেছে আধুনিক চাষাবাদের এক উন্নত প্রযুক্তি পলিফিল্ম মালচ। মালচিং পেপারের উপরের দিকে অ্যাশ কালার ও ভেতরের দিকে কাল রং থাকে। সূর্যের আলো অ্যাশ কালারের উপরে পড়ায় তাপমাত্রা বিচ্ছুরণ হয়ে সালোকসংশ্লেষণ এর মাত্রা বাড়িয়ে দিয়ে উদ্ভিদটির স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটায়। ভেতরের পেপার কালো রং এর হওয়ায় তা মাটির তাপমাত্রা ধরে রাখে। মাটি ঠা-া থাকে।
পলিফিল্ম মালচ ব্যবহারের সুবিধা : মাটিতে বিদ্যমান পুষ্টি উপাদান ও সার পুরোটা গাছ পাবে। পরে ফলন বৃদ্ধি পাবে ১-১.৫ গুণ; সূর্যের তাপ সরাসরি না লাগায় সেচ কম লাগে। মাটিতে পর্যাপ্ত পরিমাণ রস বিদ্যমান থাকে; পলিফিল্ম মালচ ব্যবহারে শুধুমাত্র নালাতে আগাছা জন্মায়। মূল বেডে আগাছা জন্মানোর সুযোগ নেই। নালার আগাছা ৪৫ দিন পর কোদাল দিয়ে টেনে উপড়ে ফেলা সম্ভব। ফলে শ্রমিক খরচ কম হয়; অনেক গাছ জলাবদ্ধতা সহ্য করতে পারেনা যেমন, টমেটো। শিট ব্যবহার করলে অতিরিক্ত পানি ঝরে যায়; সারের ও পানির পরিমাণ কম লাগে পলিফিল্ম মালচ কমপক্ষে ২টা ফসলচক্র (১ বছর) পর্যন্ত ব্যবহার করা যায়। তাই আপাতদৃষ্টিতে বেশি খরচ মনে হলেও খরচ হয় কম; এ ধরনের পেপার বাইকালার হওয়ায় সূর্যের ক্ষতিকারক রশ্মি থেকে গাছকে রক্ষা করে।
মালচিং বেড তৈরির নিয়ম : সাধারণত প্রতিটি বেড এর মাপ হবে ২ ফিট । রকমেলন, তরমুজ, লাউ, বেগুন, শসা ইত্যাদি ফসলের ক্ষেত্রে ২ ফিট এর বেড দরকার হয়। এছাড়া ক্যাপসিকাম, টমেটো, স্কোয়াশ ইত্যাদি সবজির ক্ষেত্রে ৩ ফিট এর বেড দরকার হয়। ২ ফিট এর একটা মাপ ধরে দড়ি পুঁতে দিতে হবে। সাধারণত মালচিং ফিল্ম ৪ ফিট হয় প্রস্থ ও ৫০০ মিটার লম্বা হয়। এরপর বেড এর দুইপাশে কোদাল দিয়ে এক কোদাল পরিমাণ মাটি দুইপাশে তুলে বেড সম্পূর্ণ করতে হবে। পরের ধাপ হলো রাসায়নিক সার বেডে মিশানো। এ পর্যায়ে ফসল অনুযায়ী ইউরিয়া, টিএসপি, পটাশ, জিপসাম, বোরন সার সব মিক্স করে বেডে ছিটিয়ে দিতে হবে। এরপর হাত দিয়ে বেডের শক্ত মাটি ঝুরঝুরে করতে হবে এবং সার মাটির সাথে মিক্স করতে হবে। বেড এর মাথার কাছে কোদাল দিয়ে কুপিয়ে নিতে হবে যাতে মালচিং ফিল্ম বসে। ১ বিঘা জমিতে সাধারণত ২টা পলিফিল্ম মালচ সিট এর দরকার হয়। ১টা রোল এর দাম পড়ে ৫৫০০ টাকা। মালচিং ফিল্ম এর রোলের ভেতরে একটা চিকন বাশ বসিয়ে টান দিয়ে একবারে মালচিং ফিল্ম বসাতে হবে। মালচিং ফিল্ম এর ইলাসটিসিটি থাকা সত্ত্বেও বেশি টানটান করে বসানো যাবে না এবং সতর্কতার সাথে বসাতে হবে যাতে পরের ফসলচক্রে সুন্দরভাবে ব্যবহার করা যায়। এরপর দুই সাইড এর মাটি দিয়ে মালচিং ফিল শক্তভাবে আটকে দিতে হবে।
বেড এর নিচের দিকে মাটি তুলে নালা করতে হবে এবং মালচিং ফিল্ম রোল থেকে কাটতে হবে। এর উপরে মাটি তুলে বেডের নিচের অংশ আটকে দিতে হবে। হাত দিয়ে বেডের অতিরিক্ত মাটি সরিয়ে দিতে হবে যাতে করে বেডের কিছুটা অংশ ঢেকে না যায়।
সেচের সময়। প্লাবন সেচ বা ঢালাও সেচ দিতে হবে চারপাশের নালাতে এবং এ অবস্থায় ৫-৭ দিন রাখতে হবে। নালাতে পানি দিলে তা মালচিং বেড পর্যন্ত পৌঁছে যাবে।
চারা রোপণ
৭-১০ দিন পর চারা রোপণ করতে হবে। প্লাস্টিকের ট্রে তে মাটির পরিবর্তে কোকোডাস্ট ভিত্তি হিসেবে ব্যবহার করে চারা উৎপাদন করা হয়। এতে চারার  শিকড় ক্ষতিগ্রস্ত কম হয়। পলিব্যাগে তৈরি চারাও ব্যবহার করা যাবে। একসারি বা দুই সারিতে চারা রোপণ করা যায়। সারি থেকে সারির দূরত্ব ৭৫ সেমি: এবং চারা থেকে চারার দূরত্ব ৬০ সেমি:। মালচিং ফিল্ম এ চারা বসানোর জন্য হাতে তৈরি গোল খাঁজকাটা যন্ত্রের সাহায্যে ফুটো করা হয় নিদিষ্ট দূরত্বে। চারার গোড়ায় অতিরিক্ত মাটি দেয়া যাবে না এবং চারা লাগানোর পর আলতো হাতে চাপ দিতে হবে। ২৫ থেকে ৩০ দিন বয়সে অনেক পার্শ্ব শাখা বের হয়। পার্শ্ব শাখা ভেঙে দিতে হয়। না হলে ফলন কম হয় অথবা ফল সঠিক আকার পায় না। এ সময়ে প্রতি গাছে একটা খুঁটি (উচ্চতা ২ হাত) দেয়া হয় যাতে করে গাছে ঢলে পড়া রোগ কম হয়।
(সূত্র : উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট, গাজীপুর)
ট্রাইকোকম্পোস্ট ও ট্রাইকোসলুশন/ট্রাইকোলিচেট প্রযুক্তি
ট্রাইকোকম্পোস্ট হচ্ছে এক ধরনের জৈবসার যা ট্রাইকোডার্মা নামক উপকারী ছত্রাকের সহায়তায় তৈরি করা হয়। বিভিন্ন জৈব উপাদানের সাথে ট্রাইকোডার্মা মিশ্রিত করে বিশেষ প্রক্রিয়ায় ৪০-৪৫ দিন  রেখে পচন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে যে কম্পোস্ট তৈরি করা হয় তাই ট্রাইকোকম্পোস্ট।
ট্রাইকোকম্পোস্ট তৈরির প্রয়োজনীয় উপকরণ : ট্রাইকোডার্মা নামক ছত্রাক ১/২ লিটার, গ্যাসমুক্ত তাজা গোবর ৭ ডালি বা ৮৪ কেজি(২৮%), হাস মুরগীর বিষ্ঠা ৯ ডালি বা ১০৮ কেজি (৩৬%), কচুরিপানা ৮ ডালি বা ১৫ কেজি (২৫%), নিমপাতা ১ কেজি(১%), কাঠের গুঁড়া ১ ডালি বা ৫ কেজি( ৩%), ভুট্টা ভাঙা ১/২  কেজি (২%), ছাই ১ কেজি, চিটাগুড় ২ কেজি,৩ টি রিং বা কম্পোস্টহাউজ (সিমেন্ট রিং এর ব্যাস, উচ্চতা, পুরুত্ব ৭০: ৪০: ০৫ সেমি:), চালা দেয়ার জন্য টিন/খড় ও বাঁশ। পানি পরিমাণমতো।
ট্রাইকোকম্পোস্ট তৈরির পদ্ধতি : একটি উচু সমতল স্থান নির্বাচন করতে হবে যাতে কোন পানি না জমতে পারে। একদিকে একটু ঢালু করে মাটিকে ভালোভাবে পিটিয়ে শক্ত করে তার উপর পলিথিন বিছিয়ে দিতে হবে যাতে ট্রাইকোকম্পোস্ট তৈরির সময় যে তরল পদার্থ বের হয় তা জমা হতে পারে। পলিথিন এর উপর তিনটি স্যানিটারি রিং একটির উপর একটি বসাতে হবে অথবা ইট দ্বারা কম্পোস্টহাউজ তৈরি করতে হবে। একটি বড় বালতি বা পাতিল পানিতে ভর্তি করে তার সাথে চিটাগুড় মিশ্রিত করতে হবে। পরবর্তীতে চিটাগুড় মিশ্রিত পানির সাথে ট্রাইকোডার্মার দ্রবণ ভালভাবে মিশ্রিত করতে হবে। আলাদাভাবে মাটিতে পলিথিন বিছিয়ে তার উপর ট্রাইকোকম্পোস্ট এর বিভিন্ন উপাদান নির্দিষ্ট পরিমাণে স্তরে স্তরে ঢালতে হবে। উপাদানসমূহ ঢালার পর তার সাথে চিটাগুড় ও ট্রাইকোডার্মা মিশ্রিত দ্রবণ ও পরিমাণমতো পানি মিশাতে হবে। এরপর সমস্ত উপকরণ কোদাল দিয়ে ভালভাবে মিশ্রিত করতে হবে। ভালভাবে মেশানো হলে তা রিং এর মধ্যে বা কম্পোস্টহাউজে ঢালতে হবে। পরবর্তীতে উপরিভাগে চটের বস্তা দিয়ে ঢেকে দিতে হবে যাতে মুরগী বা পাখি কম্পোস্টের উপরিভাগ নষ্ট না করতে পারে। ট্রাইকোকম্পোস্ট তৈরির সময় যে তরল পদার্থ বের হয় তাকে বলা হয় ট্রাইকোলিচেট। ১ম দশ দিন যে ট্রাইকোলিচেট বের হয় তা পুনরায় কম্পোস্ট হাউজে ঢালতে হবে এবং দশদিন পর যে লিচেট বের হবে তা বোতলে ভরে সংরক্ষণ করতে হবে। সংরক্ষণকৃত লিচেট পুনরায় ট্রাইকোকম্পোস্ট তৈরির সময় ব্যবহার করা যায় বা ফসলের মাঠে রোগবালই দমন বা পুষ্টির জন্য ব্যবহার করা যায়। ২০-২৫ দিন পর কম্পোস্টহাউজে উপাদানসমূহ শক্ত কাঠি দিয়ে ভালভাবে নেড়ে চেড়ে দিতে হবে। ৪০-৪৫ দিন পর কম্পোস্ট তৈরি হয়ে যাবে এবং হাউজ থেকে বের করতে হবে। কম্পোস্ট বের করে ছায়াযুক্ত স্থানে ভালভাবে শুকাতে হবে। শুকানোর পর বস্তায় ভরে ছায়াযুক্ত স্থানে সংরক্ষণ করতে হবে। ট্রাইকোকম্পোস্ট সার পলিব্যাগে ভরে ১৫-২০% আর্দ্রতায় ১ বছর পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যায়।
 ট্রাইকোকম্পোস্ট এর গুণাগুণ  
ট্রাইকোকম্পোস্ট সারে ৩৫% মুরগির বিষ্ঠা থাকে যা মাটিতে দেয়ার ফলে ফেনোলিক বস্তু নিসিঃরণ করে, যা গাছের ক্রিমি রোগ দমনে সহায়ক; মাটিতে বিদ্যমান ক্ষতিকর ছত্রাক থেকে গাছকে রক্ষা করে ও উদ্ভিদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে; জমিতে গন্ধক, দস্তার ঘাটতি পূরণ করে এবং প্রাকৃতিকভাবে গাছের বৃদ্ধিকারক হরমোন সরবরাহ করে; মাটিতে পানিধারণ ক্ষমতা বাড়ায় ও মাটির গঠন উন্নত করে; উৎপাদিত ফসলের গুণগত মান বৃদ্ধি হয় ও গাছের মূলাঞ্চলে নিঃসৃত রাসায়নিক উপাদানকে পরিবর্তন করে জীবাণুর জন্য অনুপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করে; মাটিতে রাসায়নিক সারের ব্যবহার কমায় ও মাটিতে বায়ু চলাচল বৃদ্ধি করে।
ট্রাইকোকম্পোস্ট ও ট্রাইকোলিচেট এর ব্যবহার : প্রতি শতাংশ জমিতে ফসলভেদে ৮-১০ কেজি ট্রাইকোকম্পোস্ট ব্যবহার করতে হবে। এছাড়া ১৫-২০ মিলি লিটার ট্রাইকোলিচেট ১ লিটার পরিষ্কার পানিতে মিশিয়ে ব্যবহার করা যায়।
সবজি চাষে বাংলাদেশ একটি অত্যন্ত সম্ভাবনাময় দেশ। দেশের জনগণের দীর্ঘমেয়াদি পুষ্টি, খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ ও খাদ্যে স্বয়ংসম্পুর্ণতার টেকসই রূপ দিতে নিরাপদ সবজি উৎপাদনে জৈব কৃষি প্রযুক্তির বিকল্প নেই। এ প্রযুক্তি ব্যবহারে পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখা সর্বোপরি জীববৈচিত্র্য রক্ষা ও নিজেদের দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে সবজি রপ্তানিতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে পারে।
সূত্র: উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্র ও স্মলহোল্ডার এগ্রিকালচারাল কম্পিটিটিভনেস প্রজেক্ট, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কেন্দ্র, গাজীপুর।

লেখক : অতিরিক্ত কৃষি অফিসার (এল.আর), প্রশাসন ও অর্থ উইং,  সংযুক্ত, কৃষি তথ্য সার্ভিস, খামারবাড়ি, ঢাকা, মোবাইল:-০১৮৬২৫৫৩০১২ ই-মেইল : mahajubatasmin@gmail.com


COVID19 Movement Pass Online Police Clearance BD Police Help line Expatriate Cell Opinion or Complaint NIS Bangladesh Police Hot Line Number Right to Information PIMS Police Cyber Support for Women BPWN Annual Training Workshop Achievement & Success PHQ Invitation Card
Press Release Recruitment Information Procurement / Tender Notice Legal Instrument Innovation Corner Detective Magazine Bangladesh Football Club Diabetes-Covid19 Exam Results Accident Info Important Forms

Apps

icon icon icon icon icon icon